চট্টগ্রামে অগ্নিকাণ্ডে নিঃস্ব দুর্দশাগ্রস্ত মুক্তিযোদ্ধার পাশে দাড়ালেন মানবিক ডিসি জাহিদুল ইসলাম
দৈনিক মায়ের আঁচল রিপোর্ট বিশেষ প্রতিনিধি চট্টগ্রাম,এস এম জহিরুল ইসলাম বিদ্যুৎ :
চট্টগ্রাম জেলার দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র দু’দিনের মাথায়ই আবারও প্রমাণ মিলল—‘মানবিক ডিসি’ শুধু একটি উপাধি নয়, এটি মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিয়ার কার্যক্রমের বাস্তব প্রতিচ্ছবি।
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার দক্ষিণ বরুমছড়ায় ৭৬ বছর বয়সী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য মোহাম্মদ ইউনুচের ছয় রুমের টিনশেড বাসা, রান্নাঘর ও একটি মোটরসাইকেলসহ সমস্ত আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায় ২০ নভেম্বরের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে। মুহূর্তেই সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন তিনি ও তার ১১ সদস্যের যৌথ পরিবার। শারীরিকভাবে অসুস্থ স্ত্রী—যিনি দীর্ঘদিন ধরে ব্রেন স্ট্রোকজনিত কারণে প্যারালাইজড, আর নিজেও বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগতে থাকা এই বীর মুক্তিযোদ্ধার সামনে নেমে আসে চরম মানবেতর পরিস্থিতি।
এমন খবর পেয়েই দায়িত্ব গ্রহণের ব্যস্ততার মাঝেও থমকে দাঁড়ালেন নবাগত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিয়া। সারাদেশে মানবিকতার দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিচিত এ কর্মকর্তা সঙ্গে সঙ্গে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িতে গিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারের খোঁজখবর নেন এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাথমিক সহায়তা হিসেবে ৫ বান্ডেল টিন, নগদ ২০ হাজার টাকা, ২৫ কেজি চাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রদান করেন।
কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট নন মানবিক ডিসি জাহিদুল ইসলাম। দিনের দীর্ঘ সরকারি সভা—সেটিও তাকে থামাতে পারেনি। তিনি নিজ দপ্তরে ডেকে নেন মুক্তিযোদ্ধার ছেলে রাকিবকে। ডিসিকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান জানান ঘর নির্মাণ করতে আরো আনুমানিক ৭৫ হাজার টাকা লাগবে। এটা শুনা মাত্র ক্ষতিগ্রস্ত ঘর পুনর্নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরও ৭৫ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেন তিনি। একইসঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউএনওকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটির নিয়মিত খোঁজ নেওয়া এবং প্রয়োজনে দ্রুত সহযোগিতা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন।
আর্থিক সহায়তার চেক হাতে পেয়ে আবেগে কাঁদতে কাঁদতেই রাকিব বলেন,
“ডিসি স্যার একজন খুবই মানবিক মানুষ। আমরা কল্পনাও করিনি, এত দ্রুত উনি এমন সাহায্য করবেন। আল্লাহ উনাকে আরও উন্নতি দান করুন।”
আজকেই আবেদন করেছিলাম। এক মুহূর্ত দেরি না করে আজকেই আমাকে ৭৫ হাজার টাকা অনুদান দিলেন ডিসি স্যার।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুচ কৃতজ্ঞতাভরে বলেন,“ডিসি সাহেব আমার মাথার হুর। আমার বিপদের সময় উনি যে সহযোগিতা করেছেন, সারাজীবন মনে রাখবো।”
দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই চট্টগ্রামে জনমানুষের আস্থা অর্জনে যে মানবিক ও সেবামুখী প্রশাসনের অঙ্গীকার দেখিয়েছেন জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম—বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউনুচ পরিবারের প্রতি তার দ্রুত সাড়া সেটিরই উজ্জ্বল প্রমাণ।
নতুন কর্মস্থলে যোগদানের মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই মানবিকতার এমন বাস্তব দৃশ্য আবারও দেখিয়ে দিল—চট্টগ্রাম পেয়েছে একজন প্রকৃত ‘মানুষের ডিসি’।