“” বাল্যবিবাহ ও বিয়ে নিয়ে কিছু কথা “”
এস এ বিপ্লব (নারায়ণগঞ্জ)
ফোন :০১৯৫৭২৩৭০১২
দৈনিক মায়ের আঁচল রিপোর্ট নিজস্ব প্রতিবেদক হারুন অর রশিদ সাগর :- আজকাল সমাজে সবচেয়ে বেশী যতগুলো সমস্যা দেখা যায় তারমধ্যে অন্যতম হলো ছেলে-মেয়েদের বিয়ে করতে যতটা দেরি কিন্তু ভাঙ্গতে তার চেয়ে বেশী তারাতারি হয়ে থাকে রেডি। অর্থ্যাৎ তালাক দিতে আর সময় লাগে না।জরিপে দেখা যায় যে, আমাদের দেশে যে ভাবে বিয়ে ভাঙছে তার জন্য দায়ি বেশীর ভাগ নারীরা।শতকরা ৮০ ভাগ মেয়েরাই তালাক দিয়ে থাকে। এই যে তালাক সংসার জীবনে অশান্তি,যৌতুক সহ নানান সমস্যা এগুলোর জন্য যতগুলো দোষ খুজে পাওয়া যায় তারমধ্যে বাল্যবিয়ে অন্যতম একটি। সত্যি বলতে কি এমন কিছু বিষয় আছে যেগুলো বই প্রস্তুকে আইন থাকা সত্বেও সেগুলোর কোন ব্যবস্হা হয় না।যেমন – আইনে আছে শিশুশ্রম, যৌতুক,বাল্যবিয়ে, ধুমপান এগুলো কেউ করলে বা হয়ে থাকলে তার জন্য শাস্তিও জরিমানা।অথচ এগুলোর কোনটির জন্য কোন ব্যবস্হা দেখা যায় না।তাই সমাজে এসব বাড়ছেই।আমরা শহরে যারা থাকি তারা হয়তো এখন ভুলেই গেছে বাল্য বিবাহ শব্দটি।কারন শহরে বাল্য বিবাহ তেমন দেখা যায় না।তবে শহরে তালাক টা বেশি দেখা যায়।কেননা শহরের ছেলে- মেয়েরা বেশীর ভাগ ফেইসবুকে সময় কাটায়,আর ফেইসবুকে অনেকের সাথে পরিচয়, প্রেম,সম্পর্ক হয়ে বিয়ে পর্যন্ত যায়।আর এসব বিয়ে খুব কম টিকে থাকে। এছাড়া পার্ক বা বিভিন্ন ক্লাব এগুলোর মধ্যে চলে নারী- পুরুষের অবাধ বিচরন, যা সময় পার করে দেয় এবং বিয়ে ও হয়ে থাকে।তবে এধরনের সম্পর্ক ও এক সময় টিকে না।আর এসব কারনে বাল্যবিবাহ শহরে যেমন খুব কম দেখা যায় তেমনি শহরের মানুষ মনে করে বাল্যবিবাহ নেই।আসলে জেলা তো আর একটা না, জেলা হলো ৬৪ টা।একজন মানুষের পক্ষে তো আর সব জেলার খবর নেওয়া বা রাখা সম্ভব না।তবে জরিপে বলেছে বাল্যবিবাহ কমেছে এ পক্ষে সহমত পোষন করছি।কারন আধুনিক যুগ,মোবাইলের যুগ তাই ৫-১০% মানুষ হলেও কিছুটা সচেতন।কিন্তু বাল্যবিবাহ কমলে কি হবে বেড়েছে বহুবিবাহ, বিয়ে নিয়ে প্রতারনা,তালাকের ভয়াবহতা ইত্যাদি। তাই বলে বাল্যবিবাহ একেবারে যে নেই সেটা আমাদের ভেবে বসে থাকলে চলবে না।আসলে গ্রামে যেমন জ্যাম নেই, শহরে তেমনি বাল্যবিবাহ নেই।তাই গ্রামের মানুষ যেমন মনে করে জ্যাম নেই তেমনি শহরের মানুষ মনে করে গ্রামে বাল্যবিবাহ নেই।কিন্তু তারা জানে না শহরে যেটা দেখা যায় না সে বিষয় গুলো গ্রামে বেশি হয়ে থাকে। অর্থ্যাৎ দেখা যায় না বলে যে নেই, তা মনে করা উচিত না।ঠিক তেমনি একটা হলো বাল্যবিবাহ,যা আজও গ্রামে আছে।আছে বললে ভুল হবে মনে হয় ছিল, আছে, থাকবে।এমন অনেক গ্রাম আছে যেখানে এখনো বিদ্যুৎ পৌছেনি,গ্যাস যায় নি,বাল্যবিবাহ রোধ হয়নি।আসলে কে কার খবর রাখে।আমি টাঙাইলের নাগরপুর থানার চামটা মির্জাপুর নামক গ্রামে আত্মীয় থাকার কারনে চেষ্টা করি প্রতি বছর একবার যেতে। সেই সুবাদে সর্বশেষ ২০২০ সালে গিয়েছিলাম। তখন গিয়ে দেখলাম সেই গ্রামে সবে মাত্র বিদ্যুৎ গেছে।আর বাল্যবিবাহ সেই ছোটবেলায় দেখে এসেছি এখনো আছে।এখানে কোন সংবাদিক আছে বলে মনে হয় না।আবার কোন সাংবাদিক ঐসব গ্রামে যায় বলেও মনে হয় না।তার মানে স্বাধীনতার ৫০ বছর পর ঐ গ্রামের মানুষজন বিদ্যুৎ দেখতে পায়,তবুও পেয়েছে।কিন্তু বাল্যবিবাহ সেটা তো এখনো রয়েছে। এই বাল্যবিবাহ কবে বন্ধ হবে তা কি কেউ বলতে পারে।অনেকে বলছে বাল্যবিবাহ কিছুটা কমেছে। হে কমেছে ঠিকই কিন্তু সেটা শহরে। গ্রামে এখনো রযেছে।যাই হোক একটা কথা না বললেই নয়, বিয়ে নিয়ে যত সমস্যা দেখা যায় তাতে আমরা শুধু বাল্যবিবাহ কে দোষারোপ করতে পারবনা। বরং বাল্যবিয়ে ছাড়াও আরো অনেক সমস্যা আছে। যেমন- প্রতিষ্ঠিত বিয়ে, অপ্রতিষ্টিত বিয়ে,অশিক্ষিত,অর্ধশিক্ষিত পরিবারে বিয়ে, বেকার জীবনে বিয়ে,ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন কাউকে বিয়ে,পাত্র -পাত্রী নির্বাচন করতে ভুল করা এসব বিষয় হলো অন্যতম কারন। আমি মনে করি বিয়ে যত ধরনের বা যত প্রকার থাকুক না কেন? সে গুলো বাদ দিয়ে নতুন ভাবে যোগ করে বলব বিয়ে দুই প্রকার। এক প্রতিষ্ঠিত বিয়ে, দুই অপ্রতিষ্ঠিত বিয়ে। প্রতিষ্ঠিত বিয়ে বলতে আমি সেটাকেই বুঝি।যখন একটা ছেলে নিজের পায়ে বা নিজেই নিজেকে ভালো কোন চাকুরী তে যোগ দিয়ে ইনকামের পথ করে থাকে, তারপর বিয়ে করে । কিংবা কোন পরিবার তার সন্তানাদী কে প্রতিষ্ঠিত করিয়ে তারপর বিয়ের উদ্দ্যেগ নিযে থাকে।কিন্তু কিছু ছেলে আছে বা কিছু পরিবার আছে যারা মেয়েদের পরিবারের উপর নির্ভর করে থাকে। বিশেষ করে যৌতুকের। যারা জীবনে প্রতিষ্টিত হয়ে বিয়ে করেছে তাদের বেশির ভাগ সংসার জীবন ভালো হয়ে থাকে। আরেকটা হচ্ছে অপ্রতিষ্ঠিত বিয়ে। অনেকে আছে লেখাপড়া শেষ করে চাকুরী পেতেই জীবনের অনেক সময় চলে যায়। আবার অনেকের বেকার জীবন যেন কোন ভাবে কাটছেই না। কিন্তু বযস তো আর বসে থাকে না। তাই বয়স আর বংশরক্ষা এসব ভেবে বিয়ে করিয়ে থাকে।আর এই অপ্রতিষ্টিত বিয়ে কে বলতে পারি সংসার ভাঙার অন্যতম কারন।অপ্রতিষ্টিত হয়ে জীবনে বিয়ে করলে সেই জীবন তেমন একটা ভালো যায় না।সেখানে অর্থের অভাব, অনটন লেগেই থাকে।ফলে এক সময় নারী বা পুরুষ বিয়ে ভাঙতে বাধ্য হয়।অভাব অনটন এগুলোও সংসার ভাঙার কারন হয়ে থাকে।আবার অশিক্ষিত ছেলের কাছে বা অশিক্ষিত পরিবারে ছেলে বিয়ে করালে বা মেয়ে কে বিয়ে দিলে। তখন কারো পরিবারের সাথে মিলিয়ে চলতে কষ্ট হয়ে থাকে। তাই আমি মনে করি শিক্ষিত মেয়ে, শিক্ষিত ছেলে বা উভয় পরিবার শিক্ষিত হলে ভালো হয়। কারন উচ্চ শিক্ষিত লোকেরা খুব কমই আছে যারা যৌতুক দা্বী করে।কিংবা আর যাই করুক না কেন মেরে ফেলবে না।কিন্তু অশিক্ষিত পরিবারে দেখা যায় বেশীর ভাগ যৌতুকের জন্য অত্যাচার করে এমন কি মেরেও ফেলে।অশিক্ষিত -অর্ধশিক্ষিত পরিবারে বিয়ে দেওয়াও ঠিক না,বিয়ে করাও ঠিক না।কারন সমাজে যত অপরাধ মূলক ঘটনা ঘটে থাকে তার ৯০% ভাগ-ই মানুষ অশিক্ষিত আর অর্ধশিক্ষিত হওয়ার জন্য।কিংবা এসব পরিবারে। হয়তো অনেকে বলবে যে এমন কত আছে, মেয়ে বিয়ে পাশ ছেলে এইট বা এসএসসি।কিংবা ছেলে বিয়ে পাস মেয়ে আন্ডার ম্যাট্রিক। হে আছে এমন অনেক সেটা আমি, আপনি হয়তো দেখেছি।কিন্তু খোজ নিলে জানবেন যে,এসব পরিবার কতটুকু সুখী বা কয়টা পরিবার ঠিকে আছে।আর যে কটা টিকে আছে সেগুলোর বেশির ভাগ হয়তো মেয়ে বা ছেলে কেউ না কেউ নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে।একটা কথা আছে যে,নারী সব জায়গায় মানায় না, তবে তারা নিজেকে মানিয়ে নেয় বা নিতে চেষ্টা করে । এটা নারীর একটা গুণ বলতে পারেন।আবার নিজ জেলার বাইরেও বিয়ে দেওয়া ঠিক না, এতে করে সহজে মানিয়ে নিতে পারে না কেউ কাউকে।কেন না দুজন দুই পরিবেশে বড়।দুই জেলায় বড়,দুই পরিবেশ আর দুই জেলার আবহাওয়া দুই রকম।এমনি তেই এক আবহাওয়ায় নানা রূপ দেখা যায় মানুষের মাঝে। এছাড়াও অনেক পরিবার আছে ভালো করে ছেলে – মেয়ের খোঁজ খবর না নিয়েই বিয়ে দিয়ে থাকে পরে দেখে যে, ছেলে খারাপ বা মেয়ের অন্য কারোর সাথে সম্পর্ক আছে।আবার অনেকে আছে মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে কিন্তু ছেলের কিসে সুখ হবে সেটা দেখে না।আমি দেখেছি আমার পরিচিত একজনের বিয়েতে, মেয়ের পরিবার ছেলের খবর নিয়ে ছেলেকে পছন্দ করে। কিন্তু ছেলের কিসে সুখ সেই খবর ছেলের কাছ থেকে নেয়নি।ছেলেও বুঝতে পারেনি কারন ছেলের পরিবারের উপর বিশ্বাস ছিল। কিন্তু বিয়ের পরে ছেলে খোজ নিয়ে জানতে পারে তার মনের মত মেয়েও হয়নি আবার শ্বশুর বাড়িও হয়নি।কেননা ছেলের খুব ইচ্ছা ছিল বিয়ে পাস মেয়ে বিয়ে করবে।স্হানীয় বাড়িঘর ইত্যাদি থাকবে। কিন্তু কিছুই নেই।মানে ছেলের মনের মত একটু হয়নি। তো আর কি করা এ বিয়ে ছেলে মন থেকে একটুও মেনে নিতে পারে নি, তাই বিয়েও আর বেশি দিন টিকে থাকে নি।এজন্য ছেলে- মেয়ের সাথে দুই পরিবারের কথা বলে নেওয়া উচিত।তাই সমাজ থেকে বাল্যবিবাহ বা বর্তমান যে ভাবে বিয়ে ভাঙন হচ্ছে সেগুলো থেকে সচেতন হতে হলে আমি, আপনি তথা সমাজকে সচেতন হতে হবে।এজন্য যদি আমরা সমাজ থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজ এবং পরিবার সচেতন হতে পারি তবে হয়তো কিছুটা হলে ও কমবে বাল্যবিবাহ,কিংবা বিয়ে ভাঙনের মেলা।আরেক টি বিষয় কাজ করে, সেটা হলো আবেগ আর বিবেক।আবেগের বিয়ে বলতে মনে করি ৩০ বছরের নিচের বিয়েকে। কারন ৩০ বছর পর্যন্ত মানুষের প্রেমের আবেগ গভীর কাজ করে। ৩০ আগে বিশেষ করে ছেলেদের বিয়ে করালে খুব কম টিকে থাকে। ৩০ এর পরে মানুষ পরিনত বয়সে আসে তখন আর আবেগ কাজ করে না তেমন একটা। তাই আবেগের বিয়ে থেকে দুরে থাকা ভালো। কারন যারা সত্যিকার মানুষ তারা কখনো ভাংগতে জানে না বরং গড়ার স্বপ্ন দেখে ও দেখায়।ভাঙতে পারে সবাই কিন্তু গড়তে পারে কজন।এই গড়ার মানুষ খুব কম দেখা যায় কিন্তু ভাঙ্গার মানুষের অভাব নেই।তাই বাল্যবিয়ে থেকে শুরু করে যতগুলো কারন আমাদের চোখে পরে সেই সব কারন গুলোই আমাদের কে সমাধান করতে হবে।বাল্যবিবাহ রোধ বা যৌতুক নিরোধ করতে হলে আইন করা উচিত এবং শুধু আইন করলে হবে না আইন বাস্তবায়নও করতে হবে।কেন না প্রকাশ্যে ধুমপান করলে কিন্তু আইনে বলা আছে জরিমানা ও জেল।কিন্তু বাস্তবায়ন নেই বলে আজও ধুমপান চলছে ধুমধাম।ঠিক তেমনি আইনে আছে বাল্যবিয়ে আর যৌতুক চাইলে বা দিলে বা নিলে দুজনেই সমান অপরাধী।কিন্তু বাস্তবায়নে আজও দেখিনি, দেখা তো দুরের কথা শুনলামও না যে, যৌতুক কিংবা বাল্য বিবাহ এ অপরাধের জন্য তার বা কারো সাজা হয়েছে।তাই আইন করতে হবে, মানতে হবে এবং জানাতে হবে। আইনের পাশাপাশি শিক্ষার বিষয়ে সচেতন হবে। আর কুসংস্কার এগুলো সমাজ থেকে দুর করতে হতে হবে। কেন না আধুনিক জাতিতে কখনো কুসংস্কার মানায় না।অথচ এখনো শোনা যায় যে, মুখ দিয়েছেন যিনি আহার দিবেন তিনি।হয়তো আহার তিনিই দিবেন, কিন্তু মাধ্যম তো আমি, আপনি, সে। আর এই মাধ্যম যদি নড়বড়ে হয় তবে সব ভেংগে যায়।তাই সেই ভাবনা থেকে সন্তান উৎপাদন বৃদ্ধি করা ঠিক না।যদিও এ যুগে আবার একটা বিষয় ভালো দেখা যায়, সেটা হলো সন্তানাদি খুব বেশি নিতে দেখা যায় না কোন দম্পত্তি কে। বিশেষ করে শহরে, শিক্ষিত সমাজে। তবে হয়তো গ্রামে এখনো বাড়ছে এসব বিষয়। এখনো রয়ে গেছে সেই অজো পাড়া গায়ে
বাল্যবিবাহ সহ কিংবা অশিক্ষিত সমাজে।