
গণশুনানিতে মানবিক ডিসি জাহিদুল ইসলাম এর সংশ্লিষ্ট দপ্তর কে তাৎক্ষণিক নির্দেশনা প্রদান
দৈনিক মায়ের আঁচল রিপোর্ট বিশেষ প্রতিনিধি,এস এম জহিরুল ইসলাম বিদ্যুৎ :
চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানার ডোংরা গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষিকা নাছরীন আকতার। তিন বছরের একটি ছেলে এবং ছয় বছরের একটি মেয়ে সন্তান নিয়ে সুখেই সংসার চলছিল তাঁর।
কিন্তু ২০২১ সালে হঠাৎ ধরা পড়ে তাঁর দুই কিডনি নষ্ট। শারীরিক দুর্বলতার কারণে ডায়ালাইসিস করার মতো অবস্থাও নেই—ডাক্তাররা দ্রুত কিডনি প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন।
এ খবর শুনে ভেঙে পড়েন এই শিক্ষিকা। কারণ কিডনি প্রতিস্থাপনের ব্যয় অত্যন্ত বেশি। আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধারদেনা করে কোনোভাবে সাময়িক চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।
চট্টগ্রামের নবাগত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা আজ বুধবার ( ২৬ শে নভেম্বর)গণশুনানি করবেন—এ কথা শুনে তিনি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে উপস্থিত হন।
সারাদেশে ‘মানবিক ডিসি’ হিসেবে পরিচিত এই জেলা প্রশাসক তাঁর আবেদন মনোযোগ দিয়ে পড়ে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালককে আর্থিক সহায়তার নির্দেশ দেন। নির্দেশনা পাওয়া মাত্রই তাঁকে নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
শিক্ষিকা নাছরীন আকতার বলেন,
“আমার স্বামীর ক্ষুদ্র ব্যবসা ও আমার শিক্ষকতার আয়ে আমাদের সংসার ভালোই চলছিল। করোনা মহামারিতে স্বামীর ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পুরো সংসার আমার আয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ২০২১ সালের শেষ দিকে শুরু হয় আমার কিডনি জটিলতার। সামান্য আয়ের টাকা ও স্বামীর পৈতৃক কিছু সম্পদ বিক্রি করে দীর্ঘ চার বছরেরও বেশি সময় ধরে চিকিৎসা নিয়েছি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. ফয়েজুর রহমান, অধ্যাপক ডা. দিন্তী চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. শওকত আলী, ইউএসটিসির অধ্যাপক ডা. এ এম এম এহতেশামুল হক এবং নয়াদিল্লির ফরটিজ হাসপাতালের প্রফেসর ডা. অনিল প্রসাদ ভাটের অধীনে।
হঠাৎ ২০–২৫ দিন আগে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা যায় আমার ক্রিয়েটিনিন ১০.৪৯ এবং ইজিএফআর মাত্র ৪। ডাক্তাররা দ্রুত ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন। অধ্যাপক ডা. ফয়েজুর রহমান জানান, আমার ওজন অত্যধিক কমে যাওয়ায় দ্রুত প্রতিস্থাপনই উত্তম। আর্থিক সংকটের কারণে এই ব্যয়বহুল চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এখন আমি জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে।”
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বের হয়ে প্রতিবেদকের সঙ্গে টেলিফোনে কথা হলে তিনি আরও জানান—“ডিসি স্যার শুধু নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েই বিদায় দেননি; সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে যাতে চিকিৎসা সহায়তা পাই—সেটির ব্যবস্থাও নিজে থেকে করার আশ্বাস দিয়েছেন। একজন শিক্ষিকা হিসেবে তিনি আমাকে যথাযথ সম্মান দিয়েছেন।”
আনোয়ারা উপজেলার পারৈকোরা ইউনিয়নের তাতুয়া গ্রামের মোঃ আবদুস সালাম হার্ট, ফুসফুসসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্যের আবেদন করেছিলেন।
আজই আবেদন করে আজই সহায়তা পেয়ে তিনি ভীষণ খুশি।
তিনি প্রতিবেদককে বলেন,“ডিসি স্যার খুব ভালো মানুষ। গরিবের কথা শুনেছেন। ডাক্তার দেখিয়ে নিয়মিত চিকিৎসা ও ওষুধ খাওয়ার জন্য আমাকে যে টাকা দিয়েছেন তাতে খুব উপকার হবে। অনেকদিন ধরে হার্টের সমস্যা, পায়ের গোড়ালি ও কোমরে ব্যথা এবং ফুসফুসে পানি জমে ভুগছি। টাকার অভাবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা নিতে পারছিলাম না। এখন ডিসি স্যারের দেয়া অর্থে চিকিৎসা করতে পারবো।”
রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ২নং হোসনাবাদ ইউনিয়নের জঙ্গল দক্ষিণ নিশ্চিন্তাপুর গ্রামের মোঃ আবদুল মজিদ লিভার ও কিডনি রোগের চিকিৎসার জন্য ডিসির গণশুনানিতে উপস্থিত হন।
হোটেল কর্মচারী হওয়ায় তাঁর অল্প বেতনে সংসার চালানোই কষ্টকর; তার ওপর গুরুতর রোগে আক্রান্ত হয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও সাহায্য না পেয়ে আজ জেলা প্রশাসকের শরণাপন্ন হন।
মানবিক ডিসি তাকেও হতাশ করেননি।
২০২০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর হাটহাজারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের চারিয়া সিকদারপাড়ার এ কে এম ফজলুল কাদেরের ডান হাত ও ডান পা প্যারালাইজড হয়ে যায়। চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।
তিনিও জেলা প্রশাসকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
তিনি বলেন,
“ডিসি স্যার খুব ভদ্র ও অমায়িক। একটু আগেই আমার স্ত্রীকেও তাঁর অমায়িক আচরণের কথা বলছিলাম।”
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও মহানগর থেকে আগত সেবাপ্রত্যাশীদের আবেদন, অভাব ও অভিযোগ শুনে গণশুনানি গ্রহণ করেন।
উক্ত গণশুনানিতে তিনি ৩০ জন সেবাপ্রত্যাশীর সমস্যা শুনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।
এ সময় অন্যান্য আবেদন নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও ফলাফল সেবাপ্রত্যাশীদের অবহিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।