সাহিত্যাঙ্গন বাংলাদেশের দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে
৩১ জন কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও গবেষক পেলেন সম্মাননা স্মারক
—————
দৈনিক মায়ের আঁচল রিপোর্ট বিশেষ প্রতিনিধি ঢাকা:-‘সাহিত্য জাতির পুষ্টি’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশের সাহিত্যভিত্তিক ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ‘সাহিত্যাঙ্গন বাংলাদেশ’ এর দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে এক জাঁকজমকপূর্ণ ও গঠনমূলক আলোচনাসভা, গুণিজন সংবর্ধনা ও কবিতা পাঠের আসর অনুষ্ঠিত হয়।
প্রায়ত বিশিষ্ট ছড়াকার শাহিদুর রহমান বিশুদা মঞ্চে বাংলাদেশ শিশুকল্যাণ পরিষদ অডিটোরিযামে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে দেশের স্বনামধন্য কবি, সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, ইতিহাসবিদ, ভাষাবিদ, সম্পাদক-প্রকাশক, গবেষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গের অংশগ্রহণে অডিটোরিয়াম মূখরিত ছিল।
শুক্রবার ৮ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ও ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫খ্রিস্টাব্দ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাহিত্যাঙ্গন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি বিশিষ্ট কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, ক্রিড়াবিদ, লিটিলম্যাগ ‘বাংলা-বঙ্গ সাঁকো’র সম্পাদক-প্রকাশক এবং গবেষক সৈয়দা রুখসানা জামান শানু।
ভাষার মাসে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ দিনটিতে শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অনুষ্ঠান দুটি পর্বে বিভক্ত ছিল। প্রথম পর্বে অনুষ্ঠানের মধ্যমনি অর্থাৎ প্রধান অতিথির আসন অলংকরণ করেন মিডিয়া প্রফেশনাল গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ও স্থানীয় সরকার বিষয়ক একমাত্র পাক্ষিক ‘সকলের কথা’র সম্পাদক-প্রকাশক বরেণ্য সমর রায়। দ্বিতীয় পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ লেখক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ‘পঙতি’ লিটিলম্যাগ সম্পাদক-প্রকাশক এবং বহুমাত্রিক লেখক সৈয়দ মাজহারুল পারভেজ। পুরো অনুষ্ঠানটি অসাধরন উপস্থাপনা ও সঞ্চালনায় দায়িত্বে ছিলেন ইতিহাসবেত্তা ও প্রতœতাত্ত্বিক গবেষক, সংরক্ষক-সংগ্রাহক বহুগ্রন্থ প্রণেতা, ইতিহাস বিষয়ক পত্রিকা ‘কিরাত বাংলা’র সম্পাদক-প্রকাশক এবং চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি সোহেল মো. ফখরুদ-দীন।
জাতি গঠনে সাহিত্যের ভূমিকা ও গুণিজনদের সংবর্ধনা: এ আলোচনা সভায় বক্তাগণ বাংলা সাহিত্যকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার গুরুত্ব ও সাহিত্যের মাধ্যমে জাতির বৌদ্ধিক উন্নয়ন বিষয়ে বিশেষভাবে আলোকপাত করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন ঠাকুরগাঁও থেকে আগত কবিও লেখক দিল আরা রুমি, বগুড়া থেকে আগত লিটলম্যাগাজিন ‘একতারা’র সম্পাদক ও প্রকাশক মতিয়ার রহমান, ঢাকা মীরপুর থেকে আগত নারী বিষয়ক গবেষক অধ্যাপক শাহনাজ পারভীন লাভলী, জাতীয় কবিতা মঞ্চের সভাপতি কবি মাহমুদুল হাসান নিজামী, ঢাকা ফোরাম ও ভাষা আন্দোলন স্মৃতিরক্ষা পরিষদের সভাপতি ড. মোমতাজ উদ্দিন আহমদ, পাবনা থেকে আগত নজরুল গবেষক হাবিবুর রহমান স্বপন, ভাষা গবেষক ডা. মআআ মুক্তাদীর এবং বেঙ্গল আর্কাইভের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক কাউসার হোসেন সুইট, চট্টগ্রাম বাঁশখালি থেকে আগত ‘চট্টলানামা’ সম্পাদক-প্রকাশক মরমী কবি মোহাম্মদ নাজমুল হক শামীম প্রমুখ।
এ ছাড়াও আলোচনা ও কবিতা পাঠে অংশ নেন পাবনা থেকে আগত গল্পকার,ঔপ্যনাসিক মোখলেস মুকুল। রংপুর থেকে আগত সাফল্য সাহিত্য সংস্কৃতি পরিবার এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি কবি নাসরিন নাজ। গাইবান্ধা থেকে আগত সাফল্য সাহিত্য সংস্কৃতি পরিবার বাংলাদেশ’র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক কবি আবু নাসের সিদ্দিক তুহিন। কুমিল্লার মেঘনা থেকে আগত কবি সুরাইয়া তাহমিনা শেফু। নারায়ণগঞ্জ থেকে আগত মায়ের আঁচল সাহিত্য সামাজিক মৈত্রী পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি কবি হারুন অর রশিদ সাগর। সাতক্ষীরা থেকে আগত ব্যাংকার, লেখক ও কবি মো. ওসমান গনি। বরিশাল থেকে আগত কবি জামান মনির এবং ঢাকা থেকে আগত কবি আরজু আহম্মেদ নোমানী।
বক্তারা সাহিত্যাঙ্গন বাংলাদেশের সাহিত্য চর্চার প্রসার, নবীন লেখকদের উৎসাহ প্রদান এবং বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বমানে উন্নীত করার প্রচেষ্টা নিয়ে আলোচনা করেন। একইসঙ্গে তাঁরা উল্লেখ করেন যে, একটি জাতির সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করতে সাহিত্য ও গবেষণার কোনো বিকল্প নেই।
আলোচনা শেষে আমন্ত্রিত গুণিজনদের অর্থাৎ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ৩১’জন বরেণ্য কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ও লিটলম্যাগাজিন সম্পাদক, গবেষক এবং সাংবাদিকগণের হাতে স্ব-স্ব কাজের সমাজে অসামান্য অবদান রাখায় তাঁদের স্বীকৃতিস্বরুপ ‘সাহিত্যাঙ্গন বাংলাদেশ’ সম্মাননা ২০২৫- প্রদান করা হয়। এই উদ্যোগ নতুন প্রজন্মের লেখকদের জন্য অনুপ্রেরণার দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠবে বলে মনে করছেন আয়োজগণ।
সাহিত্যাঙ্গন বাংলাদেশের ভূমিকা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: সাহিত্যাঙ্গন বাংলাদেশ গত দশ বছর ধরে সাহিত্যচর্চাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সংগঠনটি নবীন লেখকদের জন্য কর্মশালা, সাহিত্যসভা, সাহিত্য প্রকাশনা এবং গবেষণামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বমানের সাহিত্যচর্চার সঙ্গে যুক্ত করার জন্য অনুবাদ কর্মসূচির ওপরও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সংগঠনের সভাপতি কবি সাংবাদিক সৈয়দা রুখসানা জামান শানু বলেন, “সাহিত্যের চর্চা ও প্রসারের মাধ্যমে আমরা একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে চাই। তিনি আরো বলেন, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। ‘‘সাহিত্যাঙ্গন বাংলাদেশের” এই দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আয়োজন বাংলা সাহিত্য ও গবেষণার অগ্রযাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। আলোচনাসভা, গুণিজন সংবর্ধনা এবং কবিতা পাঠের মাধ্যমে এই আয়োজন শুধু সাহিত্যিকগণের মিলনমেলা নয়, বরং নতুন প্রতিভার বিকাশ ও সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে কাজ করবে। দীর্ঘ চার ঘন্টার ফলপ্রসু আলোচনায় বহুবিদ দিক নির্দেশনার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার লক্ষ্যে এমন আয়োজন ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আয়োজকগণ। একই মঞ্চে সোহেল মুহাম্মদ ফখরুদ-দীন সম্পাদনায় ৬১৮ পৃষ্ঠাব্যাপী হযরত মুহম্মদ (সা:) এর জীবনী সংকলন ‘আখেরি পয়গম্বর নামক’ গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এছাড়াও কবি মো: ওসমান গনি রচিত ‘হেমলতার বিষ পেয়ালা’ নামক কাব্যগ্রন্থের পাঠ উন্মোচন করা হয়।